জীবনের কোনো না কোনো সময়ে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। এটি স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় স্থায়ী হয়, আর দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা এক মাসের বেশি সময় ধরে থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি গ্রহণ করলে প্রায় ৯০% মানুষ দুই মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এই লেখায় কোমর ব্যথার সম্ভাব্য কারণ, প্রতিরোধ, নিরাময়, এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কোমর ব্যথার কারণ
১. লাম্বার স্পনডোলাইসিস
কোমরের পাঁচটি হাড় বিভিন্ন কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। এটি সাধারণত বয়সজনিত বা বংশগত কারণেই হয়। এ ধরনের হাড় ক্ষয়কে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলা হয়।
২. এলআইডি (লাম্বার ইন্টারভর্টিব্রাল ডিস্ক)
এটি কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মানুষ এতে বেশি আক্রান্ত হন। হাড়ের মধ্যে ফাঁকা স্থান থাকে, যা তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দ্বারা পূর্ণ থাকে। ডিস্কের সমস্যার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
৩. বড় কোনো আঘাতের ইতিহাস
যদি কোমর ব্যথার পাশাপাশি বুকেও ব্যথা থাকে, কিংবা রোগীর আগে যক্ষ্মার মতো কোনো গুরুতর রোগের ইতিহাস থাকে, তবে এটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
৪. অন্যান্য গুরুতর কারণ
ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস, বা দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে কোমর ব্যথা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৫. অন্যান্য উপসর্গ
কোমর ব্যথার পাশাপাশি যদি জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, অরুচি, অতিরিক্ত ঘাম, বা ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে (বিশেষ করে হাঁটুর নিচে) ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি গুরুতর হতে পারে। বিশেষ করে, এক পায়ে তীব্র ব্যথা বা অবশভাব দেখা দিলে সতর্ক হওয়া উচিত।
ফিজিওথেরাপি সমাধান
কোমর ব্যথা দূর করার জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। নিচে এর বিভিন্ন পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
- ব্যায়াম থেরাপি (Exercise Therapy)
- কোমরের পেশি মজবুত করতে স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্থেনিং ব্যায়াম করা হয়।
- ব্যথা কমাতে এবং মুভমেন্ট উন্নত করতে নির্দিষ্ট যোগব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি ব্যায়াম কার্যকর।
- ইলেকট্রোথেরাপি (Electrotherapy)
- টেনস (TENS): ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন ব্যবহার করে ব্যথা কমানো হয়।
- আলট্রাসাউন্ড থেরাপি: গভীর পেশির ব্যথা এবং প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- হট এবং কোল্ড থেরাপি
- ব্যথা কমানোর জন্য হট প্যাক এবং প্রদাহ কমানোর জন্য কোল্ড প্যাক ব্যবহার করা হয়।
- ম্যানুয়াল থেরাপি (Manual Therapy)
- ফিজিওথেরাপিস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ম্যানিপুলেশন এবং মাসাজ পদ্ধতি ব্যথা দূর করতে সহায়ক।
- পোস্টার সংশোধন (Posture Correction)
- সঠিক ভঙ্গিমায় বসা, দাঁড়ানো এবং হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে ফিজিওথেরাপিস্ট সাহায্য করে।
- কোমর সাপোর্ট বা বেল্ট
- কোমরের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ফিজিওথেরাপিস্ট নির্ধারণ করবেন।
সতর্কতা এবং চিকিৎসা পরামর্শ
- ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- নিয়মিত ফিজিওথেরাপি এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে কোমর ব্যথা প্রতিরোধ ও নিরাময় সম্ভব।
- সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ কোমর ব্যথা কমাতে সহায়ক।