গিলিয়ান-বারে সিন্ড্রোম (GBS) রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি

Table of Contents

গিলিয়ান-বারে সিন্ড্রোম (GBS) রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি: বিস্তারিত গাইড

গিলিয়ান-বারে সিন্ড্রোম (Guillain-Barré Syndrome – GBS) একটি বিরল স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে রোগীর ইমিউন সিস্টেম শরীরের পেরিফেরাল নার্ভে আক্রমণ করে। এর ফলে পেশি দুর্বলতা, স্নায়বিক সমস্যা এবং কখনো কখনো পক্ষাঘাত হতে পারে। ফিজিওথেরাপি GBS রোগীদের পুনরুদ্ধারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগীর শারীরিক সক্ষমতা, চলাফেরা এবং স্বনির্ভরতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।


GBS রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপির লক্ষ্য:

  1. পেশি শক্তি এবং সমন্বয় পুনরুদ্ধার করা।
  2. জয়েন্টের গতিশীলতা বজায় রাখা এবং শক্তভাব প্রতিরোধ করা।
  3. চলাফেরার দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  4. শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যকারিতা উন্নত করা।

GBS চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির ধাপগুলো:

১. অ্যাকিউট (তীব্র) পর্যায়:

  • লক্ষ্য: রোগী যদি শয্যাশায়ী হন, তাহলে জটিলতা প্রতিরোধ করা।
  • প্রধান কার্যক্রম:
    • পজিশনিং: শরীরের সঠিক অবস্থানে রাখা, যাতে বেডসোর বা চাপজনিত ক্ষত না হয়।
    • প্যাসিভ রেঞ্জ অফ মোশন (PROM) এক্সারসাইজ: পেশি ও জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখা।
    • শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম: ফুসফুসের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম করানো।

২. রিকভারি (পুনরুদ্ধার) পর্যায়:

  • লক্ষ্য: ধীরে ধীরে পেশির শক্তি ও চলাফেরা পুনরুদ্ধার।
  • প্রধান কার্যক্রম:
    • অ্যাকটিভ-অ্যাসিস্টেড রেঞ্জ অফ মোশন (AAROM): রোগীকে সামান্য সাহায্য করে নড়াচড়া করানো।
    • ধীরে ধীরে পেশি শক্তি বাড়ানো: হালকা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড বা ওজন ব্যবহার করে।
    • ভারসাম্য ও সমন্বয় প্রশিক্ষণ: বসা, দাঁড়ানো এবং হাঁটার অনুশীলন করানো।
    • ফাংশনাল ট্রেনিং: রোগীকে বিছানা থেকে উঠতে, বসতে এবং স্থান পরিবর্তনে সাহায্য করা।

৩. রিহ্যাবিলিটেশন (পুনর্বাসন) পর্যায়:

  • লক্ষ্য: রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং দৈনন্দিন কাজগুলোতে সক্ষম করা।
  • প্রধান কার্যক্রম:
    • শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম: ওজন, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড, এবং শরীরের নিজস্ব ওজন ব্যবহার করে।
    • গেইট ট্রেনিং (হাঁটা): সঠিক ভাবে হাঁটার প্রশিক্ষণ।
    • এন্ডুরেন্স ট্রেনিং: হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন সাইক্লিং, হাঁটা বা সাঁতার।
    • মোটর স্কিল উন্নয়ন: হাত ও আঙুলের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ব্যায়াম।

বিশেষ ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি:

  1. হাইড্রোথেরাপি (Hydrotherapy):
    • পানির ভেতরে ব্যায়াম করলে পেশির চাপ কমে এবং ব্যথা লাঘব হয়।
  2. ইলেকট্রোথেরাপি (Electrotherapy):
    • পেশির ব্যথা ও শক্তভাব কমানোর জন্য TENS বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা।
  3. অর্থোটিকস ও সহায়ক যন্ত্রপাতি:
    • ফুট ড্রপ বা দুর্বল জয়েন্টের জন্য ব্রেস বা স্প্লিন্ট।
    • চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ার, ওয়াকার বা ক্রাচ ব্যবহার।
  4. শ্বাস-প্রশ্বাস থেরাপি:
    • শ্বাস-প্রশ্বাস পেশি শক্তিশালী করা এবং ফুসফুস পরিষ্কার রাখার পদ্ধতি।

ফিজিওথেরাপি করার সময় সতর্কতা:

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়ানো: অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে।
  • ব্যথা মনিটর করা: ব্যায়াম যেন ব্যথাহীন হয় তা নিশ্চিত করা।
  • ধীরে ধীরে অগ্রগতি: হঠাৎ কার্যক্রমের মাত্রা বাড়ানো উচিত নয়।

ফিজিওথেরাপির উপকারিতা:

  1. পেশির শক্তি ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  2. শারীরিক ও মানসিক আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
  3. দৈনন্দিন কাজ সহজতর করে।
  4. দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা প্রতিরোধ করে।

উপসংহার:

GBS রোগীর পুনরুদ্ধারে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। এটি ধাপে ধাপে রোগীর শারীরিক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। সঠিক থেরাপি এবং ধৈর্যশীল চর্চার মাধ্যমে GBS রোগীরা একটি স্বাভাবিক ও সার্থক জীবনযাপন করতে পারে।

যেসকল শারীরিক সমস্যার জন্য আমরা ফিজিওথেরাপি দিয়ে থাকি

সকল ফিজিওথেরাপি দিয়ে থাকি

ইউনিক ফিজিওথেরাপি

আপনার স্বাস্থ্য আমাদের অগ্রাধিকার

আসসালামু আলাইকুম, ইউনিক ফিজিওথেরাপি, রিহ্যাবিলিটেশন এবং হিজামা সেন্টারে স্বাগতম। আমরা কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Powered by WpChatPlugins