*স্ট্রোক রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি* হলো এমন একটি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যা রোগীর স্নায়বিক এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। স্ট্রোকের কারণে শরীরের কিছু অংশ প্যারালাইজড বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এবং সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।
*স্ট্রোক রোগীর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ধাপসমূহ*
১. প্রাথমিক পর্যায় (Acute Phase):*
স্ট্রোকের প্রথম কয়েকদিন বা সপ্তাহে ফিজিওথেরাপির উদ্দেশ্য হলো:
– *রোগীকে সঠিক অবস্থানে রাখা:*
– পেশির শক্তভাব বা কন্ট্রাকচার প্রতিরোধ।
– রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা।
– *প্যাসিভ মুভমেন্ট (Passive Exercises):*
– ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর হাত-পা নাড়ানোর মাধ্যমে পেশি ও জয়েন্ট সচল রাখেন।
– *শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম:*
– শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে।
২. পুনর্বাসন পর্যায় (Rehabilitation Phase):*
এই পর্যায়ে রোগীর স্বাভাবিক চলাফেরা এবং দৈনন্দিন কাজ করার দক্ষতা পুনরুদ্ধার করা হয়।
ক. পেশি ও জয়েন্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:
– *অ্যাক্টিভ মুভমেন্ট (Active Movement):*
রোগী নিজের হাত-পা নাড়ানোর অনুশীলন করেন।
– *স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ:*
পেশির টান কমাতে সাহায্য করে।
– *রেসিস্টেড এক্সারসাইজ:*
দুর্বল পেশি শক্তিশালী করতে প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম।
খ. ভারসাম্য ও ভঙ্গি উন্নয়ন:*
– *সিটিং ব্যালেন্স ট্রেনিং:*
রোগীকে চেয়ারে বা বিছানায় সোজা বসতে শেখানো।
– *স্ট্যান্ডিং ব্যালেন্স ট্রেনিং:*
দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার।
– *ওয়াকিং এক্সারসাইজ:*
হাঁটার অনুশীলন করানো হয়; প্রয়োজনে ওয়াকার বা স্টিক ব্যবহার করা হয়।
গ. স্নায়বিক পুনরুদ্ধার:*
– *মিরর থেরাপি (Mirror Therapy):*
মস্তিষ্কে হারানো স্নায়বিক কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে।
– *ফাংশনাল ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন (FES):*
অবশ পেশিকে উদ্দীপিত করে শক্তি ও কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা।
৩. দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধার (ADL Training):*
– খাওয়া, পোশাক পরিধান, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজ শিখানো হয়।
– রোগীকে ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা।
৪. মানসিক এবং সামাজিক সহায়তা:*
– স্ট্রোকের পর হতাশা ও মানসিক চাপ কাটাতে কাউন্সেলিং।
– রোগী এবং তার পরিবারের মানসিক সমর্থন নিশ্চিত করা।
*ফিজিওথেরাপির লক্ষ্য*
1. হারানো শারীরিক শক্তি এবং কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার।
2. রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সক্ষমতা বৃদ্ধি।
3. নতুন কোনো জটিলতা (যেমন পেশি শক্ত হওয়া বা চাপের ঘা) প্রতিরোধ।
4. সঠিক অঙ্গভঙ্গি এবং চলাচলের দক্ষতা উন্নত করা।
ফিজিওথেরাপি অবশ্যই দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়া উচিত। নিয়মিত থেরাপি এবং রোগীর মনোবল ধরে রাখার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সম্ভব।